নিয়োগ দুর্নীতিতে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেনে আনলেন শুভেন্দু অধিকারী। -অলঙ্করণ: সুবর্ণরেখা টিম |
অপসারিত প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে (Manik Bhattacharya) গ্রেফতারের পর আদালতে তোলা হয়। আদালতে ইডির (ED) আইনজীবীরা যা দাবি করেন, অর্থাৎ ইডির পাওয়া তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় পড়ে যায়। ইডি দাবি করে, মানিকের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় একটি চিঠি। ওই চিঠিটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে লেখা কোনও এক দলীয় কর্মীর বলে ইডির দাবি। কী রয়েছে ওই চিঠিতে? ইডি সূত্রে খবর, দলেরই এক যুব নেতার বিরুদ্ধে দলনেত্রীকে নালিশ জানিয়েছিলেন এক কর্মী। চিঠিতে তাঁর দাবি ছিল, ওই যুব নেতা চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তুলছেন বলে অভিযোগ ছিল চিঠিতে।
রহস্যময় RK, DD
আরও রহস্যময় দু’টি বিষয় উঠে আসে ইডির সওয়ালে। ইডির আইনজীবীরা আদালতে জানান, মানিকের মোবাইলের কনটাক্ট লিস্টে সেভ করা রয়েছে RK এবং DD- এই দু’টি নাম। এই দুই নাম ঘিরে ছড়িয়েছে তীব্র জল্পনা। এই দু’টি সংক্ষিপ্ত নামের পুরো নাম কি, তা নিয়ে কৌতূহল, আলোচনার অন্ত নেই। রাজ্যের প্রায় সর্বত্র এই আলোচনা। চায়ের দোকানে, পাড়ার মোড়ের আড্ডা থেকে হাই প্রোফাইল মহলেও এই নিয়ে জল্পনা তীব্র। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে ওই RK নাম রাজ্যের এক পদস্থ পুলিসকর্তার বলে দাবি করা হয়েছে। পুলিসকর্তার নাম উল্লেখ না করলেও এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যাতে কার কথা বলা হয়েছে, তা বোঝার জন্য ফেলুদা হওয়ার দরকার পড়ে না।
আরও পড়ুন: গ্রেফতার তৃণমূলের মানিক, বিএড কলেজেও জালিয়াতি! মানিকের কনটাক্ট লিস্টে রহস্যময় RK, DD কে?
নিয়োগ দুর্নীতিতে ফেলুদা!
ফেলুদাকে টেনে চাকরি দুর্নীতির সমাধানে নামিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার টুইটারে একাধিক পোস্টে তিনি ফেলুদা, জটায়ু ও তোপসের কাল্পনিক সংলাপ তৈরি করে চাকরি দুর্নীতির কাল্পনিক সমাধান করেছেন। তাতে DD নামটি আসলে দিদি বলে দাবি করা হয়েছে। আর দিদি মানে যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাও বুঝিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। RK নামটি বাংলায় ‘আর কে’ অর্থাৎ গৌণ বিষয় বলে শুভেন্দুর ওই কাল্পনিক সংলাপে দাবি করা হয়েছে।
এই ভাবে যদি রহস্যের জাল কেটে সত্য খুঁজে নেওয়া যেত, তাহলে হয়তো তদন্ত শীঘ্রই শেষ করে প্রকৃত দোষীদের সাজা দেওয়া যেতো।
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) October 12, 2022
পুনশ্চ - চরিত্রায়ন ও অঙ্কনের স্রষ্টা অবশ্যই বিশ্ব বন্দিত বাঙালি পরিচালক, যাঁর ওপর নির্মিত সিনেমা নন্দন প্রেক্ষাগৃহে দেখানোর অনুমতি দেওয়া হয় নি।
সংলাপ কাল্পনিক: pic.twitter.com/BmLFDxJqoH
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) October 12, 2022
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) October 12, 2022
মানিকের বাড়িতে কার চিঠি?
ভার্চুয়াল ছেড়ে এবার রিয়েলিটি। বৄহস্পতিবার কলকাতায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি দাবি করছি, এই চিঠি এবং হোয়াটসঅ্যাপের ডিডি দুটো মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তার প্রাথমিক সঙ্কেত পাওয়া যাচ্ছে। তাই সিবিআই এবং ইডি, যাদের হাইকোর্ট তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে, অবিলম্বে এই ডিডি এবং মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠির তদন্ত করা হোক। বাংলার জাগ্রত জনগণ শিক্ষিত মেধাবী, বেকার যুবক যুবতীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অ্যালার্ট করেছিলেন। তিনি অন রেকর্ড যে মিথ্যে কথাগুলো বলেছেন, পরবর্তীকালে সিডিতে যা এসেছে, DD এবং চিঠি।’’
আরও পড়ুন: বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। ভোটে ছাপ ফেলবে এই পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি?
মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি
এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান বিরোধী দলনেতা। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নয়, এই দুর্নীতির সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদমর্যাদায় আছেন। তাঁকে প্রয়োজন হলে নবান্নে গিয়ে বা তাঁর ঠিক করে দেওয়া নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে জিজ্ঞাবাসাদ করা উচিত। প্রয়োজন হলে মেল করে প্রশ্নপত্র পাঠানো উচিত। আমি বিরোধী দলনেতা হিসেবে এজেন্সি এবং এজেন্সিকে যারা তদন্ত করতে বলেছে, সেই বিচার বিভাগের কাছে এই আবেদন রাখব।’’
আরও পড়ুন: কীভাবে ধাপে ধাপে নিয়োগ দুর্নীতির নীলনকশা? চক্রব্যূহ ভেদ করতে পারবে সিবিআই ?
বৄহস্পতিবার নন্দীগ্রামে একটি কর্মসূচি ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। সেখানেও প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন শুভেন্দু। মমতা বা তৃণমূল শিবির থেকে এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে আগের দিন শুভেন্দুর টুইট নিয়ে কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘কাল্পনিক অভিযোগ কেউ করলে তার কী উত্তর দেব।’’ একইসঙ্গে সারদা এবং নারদ কাণ্ডে শুভেন্দুর জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে তোপ দাগেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দুর এই সব দাবি বা অভিযোগের জবাব এদিন না দিলেও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তোপ বিরোধী দলনেতাকে নিশানা করেন। পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুরে চাকরি দুর্নীতিতে শুভেন্দুর দিকে একাধিক বার তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আক্রমণে বাম-কংগ্রেসও
শুভেন্দুর পাশাপাশি সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও আগের দিনই মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেন। তিনিও DD—র অর্থ দিদি বলে তিনিও মুখ্যমন্ত্রীকেই সরাসরি নিশানা করেন। পাশাপাশি ওই RK আসলে কে, তাও ইডি-সিবিআই-কে তদন্ত করে বের করার দাবি জানান সুজন। আবার নিয়োগ দুর্নীতির গোড়া থেকে বিভিন্ন সময় মুখ্যমন্ত্রীর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। প্রায় একই সুরে লাগাতার তোপ দেগে আসছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও।
বিরোধী দলনেতার অভিযোগে বাড়ল গুরুত্ব?
সব অভিযোগ বা দাবি পুরোপুরি রাজনৈতিক আক্রমণ। কিন্তু শুভেন্দুর মুখে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর নাম করে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ এবং জিজ্ঞাসাবাদের দাবির গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ তিনি বিরোধী দলনেতা। পদমর্যাদায় ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমান। তাই তাঁর অভিযোগে অন্য মাত্রা পেল বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। সাংবিধানিকভাবেও শুভেন্দুর মন্তব্যের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। এই ইস্যুতে ইতিমধ্যেই বিধানসভায় সরব হয়েছে বিজেপি। পদ্ম শিবির সূত্রের খবর, এই ইস্যুকেও বিধানসভার অন্দরমহল পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে তারা। স্পিকার প্রস্তাব গ্রহণ করবেন এটা তাঁরা আশা করেন না। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে আলোচনাও হয়তো হবে না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ রাজ্য বিধানসভায় লিপিবদ্ধ করানোই গেরুয়া শিবিরের উদ্দেশ্য।