নোদাখালিতে প্রশাসনিক বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। - নিজস্ব চিত্র |
শনিবার নোদাখালিতে ছিল তাঁর লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের কাজকর্ম নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক। ওই বৈঠকের শেষে সাংবাদি সম্মেলনে অভিষেক বলেন, ‘‘বিরোধীরা আগে প্রার্থী জোগাড় করুন। তার পর মনোনয়ন জমা দিতে না পারলে আমাকে ফোন করুন। কিংবা এক ডাকে অভিষেকে ফোন করুন।’’
স্বাভাবিকভাবেই এর মধ্যে রয়েছে বিরোধীদের উদ্দেশে কটাক্ষ। বিরোধীরা প্রার্থী জোগাড় করতে পারবেন না বলে খোঁচা দিয়েছেন অভিষেক। কিছুদিন আগেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিষেকের লোকসভা কেন্দ্রে গিয়ে অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালের পর থেকে এই এলাকায় অভিষেকের লোকজন ভোট করাতে দেয়নি। তার জবাবেই এদিন একথা বলেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন: বগটুইয়ে আর্থিক সাহায্য মিড ডে মিল ফান্ড থেকে! টুইটারে বোমা ফাটালেন শুভেন্দু
কিন্তু অভিষেকের এই আশ্বাসে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। প্রথমত, অভিষেক প্রশাসনের কেউ নন। কমিশনেরও কেউ নন। তাহলে তিনি এই আশ্বাস দেওয়ার কে? তবে কি পুলিশ-প্রশাসন তাঁর নির্দেশে কাজ করেন?
দ্বিতীয়ত, এমন আশ্বাস এ বছরের গোড়ায় রাজ্যের ১০৮ পুরসভার ভোটেও দিয়েছিলেন অভিষেক। কিন্তু তার পরও পুরভোটে অশান্তি হয়েছে। রক্ত ঝরেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে।
তৃতীয়ত, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। অভিযোগ উঠেছিল, বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দিতে দেয়নি রাজ্যের শাসক দল। আবার ভোটের দিনও সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশকে ভোট দানে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার পরে পরের বছর ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি এ রাজ্যে ১৮টি আসন পেয়েছিল। ভোট বিশ্লেষকদের একাংশের পর্যবেক্ষণ ছিল, পঞ্চায়েত ভোটে ভোট দিতে না পারার ক্ষোভ ইভিএম-এ প্রতিশোধ নিয়েছে আম জনতা। এবার কি তবে সেই আশঙ্কা থেকে বারবার এমন আশ্বাস দিচ্ছেন অভিষেক?
আরও প্রশ্ন উঠছে, দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও। কারণ, পুরভোটেও অভিষেকের মুখে একই রকম আশ্বাস শোনা গিয়েছিল। কিন্তু তার পরও ব্যাপক অশান্তি হয়েছে ভোটে। দলের কর্মীরা গন্ডগোলে জড়িয়েছেন। খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এমন কথা বলেছেন। তার পরও অশান্তিতে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, তবে কি নীচু তলায় দলের নিয়ন্ত্রণ নেই। এই প্রশ্নও উঠছে, নীচু তলায় গোষ্ঠীকোন্দল, পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা এবং লুটপাটের জন্যই কি গ্রামে গ্রামে অশান্তি? অভিষেকের এই আশ্বাসে আন্তরিকতা কতটা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তাঁরা তুলে ধরছেন পুরভোটের নজির।
বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাঁরা ক্ষমতায় এসেছিলেন, আজ মানুষ তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আগে নিজেরা সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন, নিজেদের বিধায়ক-সাংসদদের ধরে রাখুন, তার পর অন্যদের কথা ভাববেন।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘অভিষেকের গলায় অনুব্রত-আরাবুলের সুর। বিরোধীরা ঠিকই প্রার্থী জোগাড় করবেন।’’ এর পরই মোদী-দিদি সেটিংয়ের তত্ত্বকে উস্কে দিয়ে সুজনের মন্তব্য, ‘‘উনি তো ঠিকই বলেছেন। মনোনয়ন দিতে না পারলে দাঁড়িয়ে থেকে মনোনয়ন দেওয়াবেন। মোদীজির কাছে কথা দেওয়া আছে। বিজেপির প্রার্থীরা যাতে মনোনয়ন দিতে পারেন, এটাই অভিষেকদের সঙ্গে দিল্লির বোঝাপড়া। উনি বিজেপির মনোনয়ন করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিচ্ছেন।’’
সব মিলিয়ে অভিষেকের আশ্বাসের পরেও পঞ্চায়েত ভোট কি শান্তিপূর্ণ হবে, ভোট যত এগোচ্ছে, সেই প্রশ্নই বড় হয়ে উঠছে বাংলার রাজনীতিতে।