ইডির (Enforcement Directorate) হাতে গ্রেফতার যুব তৃণমূল (TMC) নেতা কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh)। - অলঙ্করণ: সুবর্ণরেখা টিম |
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতিতে (Recruitment Scam) এবার গ্রেফতার কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh)। হুগলির বলাগড়ের যুব তৃণমূল (TMC) নেতা কুন্তলের চিনার পার্কের ফ্ল্যাটে প্রায় ২৬ ঘণ্টা তল্লাশির পর গ্রেফতার করল ইডি (Enforcement Directorate)। তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে গ্রেফতার কুন্তল। কুন্তলের গ্রেফতারের পর নিয়োগ দুর্নীতিতে অস্বস্তি আরও বাড়ল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের।
কেন গ্রেফতার কুন্তল? নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে তৃণমূল নেতা তাপস মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে কুন্তলের নাম। জিজ্ঞাসাবাদে তাপস দাবি করেন, অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ১৯ কোটিরও বেশি টাকা তুলেছেন কুন্তল। অতিরিক্ত চার্জশিটে ইডিও সেকথা উল্লেখ করেছে। তার পরই কুন্তলকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় সিবিআই। বুধবারই সিবিআই তলবে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরাও দিয়েছিলেন। তার পর শুক্রবার সকাল থেকে কুন্তলের নিউটাউনের চিনার পার্কের অভিজাত বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে তল্লাশিতে যায় ইডির একটি দল। প্রায় ২৬ ঘণ্টা ধরে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালান কেন্দ্রীয় আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা ইডির গোয়েন্দারা। সমান্তরালভাবে বাড়িতেই কুন্তলকে জিজ্ঞাসাবাদও চলতে থাকে। ইডি সূত্রে খবর, কুন্তলের বাড়ি থেকে প্রচুর নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়। সম্পত্তি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও লেনদেনের নথির সঙ্গেই উদ্ধার হয় নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু সন্দেহজনক নথিও। একদিকে যেমন ওই সব নথি সম্পর্কে মুখ খুলতে চাননি কুন্তল, তেমনই ১৯ কোটি টাকা কোথায় গেল, তাও জানাতে চাননি ইডির তদন্তকারীদের। তার পরই তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় কুন্তলকে।
আরও পড়ুন: তৃণমূলের ঘরে হিরণ! বিজেপির তারকা বিধায়কের ঘর ওয়াপসি কি সময়ের অপেক্ষা?
কুন্তলকে গ্রেফতারের পর প্রথমে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সেখান থেকে সিজিও কমপ্লেক্স হয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নগর দায়রা আদালতে। কুন্তলকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। তারপর আদালত থেকে আবার তাঁকে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন ইডির আধিকারিকরা।
যদিও গ্রেফতারের পর থেকেই কুন্তলের দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছেন তাপস মণ্ডলই। কুন্তলের দাবি করেন, ৫০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। তার প্রতিবাদ করেছিলেন বলেই তাঁর এই পরিণতি। আবার আদালত থেকে বেরনোর সময় তাঁর বক্তব্য, তাপস মণ্ডল তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছিলেন। শেষ বার ৫০ লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন। টাকা না দিলে তাঁর শিশুসন্তানকে অপহরণ করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতিতে নোবেলজয়ীদের কী পর্যবেক্ষণ, অমর্ত্য-অভিজিৎকে বিঁধলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়
যদিও কুন্তলের সব অভিযোগ অস্বীকার করে তাপস মণ্ডলের পাল্টা দাবি, তাঁর পরিচিতড অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়েছিলেন। সেই টাকার অঙ্ক ১৯ কোটি ৪৩ লক্ষ ৫০ হাজার। চাকরিপ্রার্থীদের সেই টাকা কুন্তলকে বারবার ফেরত দিতে বলেছিলেন। কিছু টাকা ফেরত দিলেও বাকি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। সেই কারণেই ইডির কাছে কুন্তলের নাম করেছেন বলেও দাবি তাপসের।
এখন কার দাবি সঠিক, সেটা তদন্ত করে দেখছেন ইডির আধিকারিকরা। তবে তাপসও যে তাদের স্ক্যানারের বাইরে নন, সে কথা আদালতে জানিয়েছে ইডি। তাদের বক্তব্য, তাপস না থাকলে মানিক থাকত না। এই দুর্নীতিও হত না। কারণ, তাপসই প্রার্থীদের জোগাড় করে আনতেন এবং কুন্তলের কাছে পাঠাতেন। ইডির এই বক্তব্য থেকেই সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ মনে করছেন, কুন্তলকে হেফাজতে জেরা করার সময় তাপসের নাম করতে পারেন। সেই সূত্রে তাপসের দুয়ারেও পৌঁছে যেতে পারেন ইডির গোয়েন্দারা।