হৈমন্তী গাঙ্গুলির (Haimanti Ganguly) ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি। |
নিজস্ব প্রতিবেদন: নিয়োগ দুর্নীতিতে এবার নাম-রহস্যের গোলকধাঁধা। হৈমন্তী গাঙ্গুলির নাম ভাসিয়ে দিয়েছেন কুন্তল ঘোষ। নিয়োগ দুর্নীতির সব টাকা নাকি রয়েছে তাঁরই কাছে। কুন্তলের এই দাবির পরই নিয়োগ দুর্নীতিতে অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠেছেন হৈমন্তী গাঙ্গুলি নামে এই রহস্যময়ী নারী। সমাজমাধ্যমে, টিভিতে ভাসছে লাস্যময়ী হৈমন্তীর ছবি-ভিডিও। সর্বত্র তাঁকে নিয়ে আলোচনা। উঠে এসেছে হৈমন্তীর টলিউড কানেকশনও।
আরও এক ‘নাম-বোমা’ ফাটিয়েছেন এই কুন্তল ঘোষ। সেই নাম আরমান গাঙ্গুলি। কে এই আরমান গাঙ্গুলি? কুন্তলের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই-ইডির আতসকাচের নীচে থাকা গোপাল দলপতিই নাকি আরমান গাঙ্গুলি। অর্থাত্ পিতৃদত্ত নাম ‘গোপাল’-এর ছদ্মনাম আরমান এবং পদবীও ‘দলপতি’ পাল্টে ফেলে হয়েছেন ‘গাঙ্গুলি’।
কে এই গোপাল দলপতি ওরফে আরমান। নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার অপসারিত পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ। একই সঙ্গে আবার তাপস মণ্ডল এবং কুন্তল ঘোষের সঙ্গেও পরিচিত। অভিযোগ নিয়োগ দুর্নীতির বহু টাকাই এই গোপালের হাত ঘুরেই পৌঁছেছে উপর মহলে। কুন্তলেরও দাবি, তিনিই ৬০-৭০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন এই গোপাল দলপতিকে।
আর হৈমন্তী গাঙ্গুলি? হৈমন্তী হাওড়ার বাকসাড়ার কাঠুরিয়া পাড়ার মেয়ে। সেখানেই জন্ম, বেড়ে ওঠা। বর্তমানে থাকেন টালিগঞ্জের করুণাময়ীতে একটি ফ্ল্যাটে। কুন্তলের দাবি, এই হৈমন্তী গোপাল তথা আরমানের দ্বিতীয় স্ত্রী। স্বামী-স্ত্রী এই ফ্ল্যাটেই থাকতেন। তবে কয়েক সপ্তাহ আগে সেই ফ্ল্যাট তালাবন্ধ করে গাঢাকা দিয়েছেন দু’জন। এছাড়া ডালহৌসিতে হৈমন্তীর একটি অফিসও ছিল। সেখানে হৈমন্তী অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন। তবে বছর দুই আগে থেকে সেই সংস্থা বন্ধ। সেখানকার কর্মীরা জানিয়েছেন, অফিস চালু থাকার সময় এই অফিসে মাঝেমধ্যেই আসতেন হৈমন্তী। সঙ্গে আরও এক ‘স্যার’আসতেন। সেই সময় না জানলেও এখন তাঁরা মনে করছেন সেই ‘স্যার’ আসলে গোপাল দলপতি।
দিনভর এমন সব বাড়ি, ফ্ল্যাট, অফিসের খোঁজ উঠে এলেও হৈমন্তীকে চর্চা সবচেয়ে বেশি তাঁর টলিউড কানেকশন নিয়ে। জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে একটি বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেন হৈমন্তী। কীভাবে? সূত্রের খবর, টুকটাক মডেলিং করছিলেন। ওই সময় ওই সিনেমায় মূল চরিত্রে অভিনয়ের অফার নাকি পরিচালককে নিজেই দিয়েছিলেন হৈমন্তী। পরিচালক তখন অর্থসঙ্কটের কথা জানান। অর্থাত্ সিনেমার জন্য কোনও প্রযোজক পাচ্ছিলেন না পরিচালক। সেই সময় হৈমন্তী নিজেই অফার দেন টাকার। পরিচালকও রাজি হন। ফলে ওই সিনেমার প্রধান চরিত্র যেমন হৈমন্তী, তেমনই প্রযোজকও তিনি।
এর পর তিন বছর পর ২০২১-সালে আবার টলিউডে আবির্ভাব তাঁর। টলিউডে আবার বিনিয়োগ এবং অভিনয়। তবে এবার টেলি ধারাবাহিকে। ওই ধারাবাহিকে নার্সের ভূমিকায় অভিনয় করেন হৈমন্তী।
/p>
সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা এত টাকা কোথায় পেলেন সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে। আর এখানেই উঠে এসেছে গোপাল দলপতি ওরফে আরমানের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকদের অনুমান, এই নিয়োগ দুর্নীতির টাকাই ঘুরপথে ঢুকেছে টলিউডে। অর্থাৎ কুন্তল বা তাপসের থেকে টাকা নিয়েছেন গোপাল। সেই টাকা হৈমন্তীর হাত হয়েছে টলিউডে।কিন্তু সে সব ছাপিয়ে দিনভর শুধুই একটা প্রশ্ন, কোথায় গাঙ্গুলি দম্পতি। অর্থাৎ আরমান গাঙ্গুলি ও হৈমন্তী গাঙ্গুলি কোথায়? দিনভর তাঁদের খোঁজ মেলেনি। বাকসাড়ার বাড়িতে হৈমন্তীর মা বলেছেন, মেয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই। এমনকি মেয়ে মারা গিয়েছে বলেও অভিমানের সুর শোনা যায় তাঁর মায়ের কণ্ঠে। তাহলে কি যুগলেই গা ঢাকা দিয়েছেন দু’জন। ইতিমধ্য়েই গোপালকে কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। কিন্তু হৈমন্তীর নাম এই প্রথম উঠে এল নিয়োগ দুর্নীতিতে। অর্পিতা গঙ্গোপাধ্যায়ের পর দ্বিতীয় মহিলা হিসেবে নিয়োগ দুর্নীতিতে উঠে এল হৈমন্তীর নাম। এখন কবে কোথায় প্রকাশ্যে দেখা যায় হৈমন্তীকে তার দিকেই তাকিয়ে সব মহল।