রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (Governor C V Anand Bose) এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা (State Election Commissioner Rajiv Sinha)। |
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা: রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার জয়েনিং রিপোর্ট ফেরত পাঠিয়ে দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনিই নিয়োগ করেছিলেন, আবার সেই তিনিই ফেরত পাঠালেন কাজে যোগদানের নথি। এমন অভূতপূর্ব ঘটনা এ রাজ্যে তো আগে কখনও ঘটেইনি, সম্ভবত দেশেও কোথাও হয়নি। তাই এই নিয়োগ নথি ফেরত পাঠানোর অর্থ কী, আদৌ রাজীব সিনহা রাজ্য নির্বাচন কমিশনার থাকলেন কিনা, তাও স্পষ্ট নয় আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের কাছে।
রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য কমিশনার রাজীব সিনহাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল বোস। কিন্তু তিনি যাননি। এক বার নয় দু’বার। আগের বার স্ক্রুটিনির দিন ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তখন রাজীব সিনহা জানিয়েছিলেন, স্ক্রুটিনির জন্য ব্যস্ত রয়েছেন। পরে ডাকলেই যাবেন। এর পর বুধবার ডেকে পাঠান। কিন্তু এদিনও যাননি। রাজভবন সূত্রে খবর, রাজীব সিনহার না যাওয়া ভালভাবে নেননি বোস। কার্যত বিরক্তই হয়েছেন। তার পরই আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে রাজীব সিনহার জয়েনিং রিপোর্ট ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন।
কমিশনার হওয়ার পর থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রে রাজীব সিনহা। মনোনয়নে কম সময়, নজিরবিহীন অশান্তি, সংঘর্ষ, বোমা-গুলির লড়াই হয়েছে। তার পরও কার্যত চোখ কান বুঁজে থাকা নিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছেন রাজীব। আম জনতার একটা বড় অংশও কমিশনের ভূমিকায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। সোশাল মিডিয়া থেকে চায়ের চর্চায় তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। রাজভবনে যে পিস রুম খুলেছেন রাজ্যপাল, তাতে রাশি রাশি অভিযোগের পাহাড়, অথচ কমিশনার ঠুঁটো হয়ে বসে রয়েছেন। এই গোটা পর্বে উষ্মা বাড়ছিল রাজভবনেরও। তাতে ঘি ঢেলেছে বুধবার রাজভবনের ডাকে সাড়া না দেওয়া।
কিন্তু প্রশ্ন হল, চাকরি থেকে বরখাস্ত হলেন কি রাজীব? নিয়োগ নথি ফেরত পাঠানোর পর এটা নিয়েই এখন রাজনীতিবিদ থেকে সংবিধান বিশেষজ্ঞ কিংবা আইনজীবী মহলে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দেশের সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন স্বশাসিত ও স্বাধীন সংস্থা। রাজ্যের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কমিশনার নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। তিনি চাইলে কমিশনারকে বরখাস্ত করতে পারেন কিনা, সেই বিষয়টি স্পষ্ট নয়। আরও অস্পষ্ট এই নিয়োগের ফাইল ফেরত পাঠানোর অর্থ। তবে কি বকলমে কমিশনারকে বরখাস্তই করল রাজভবন? আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশ এই মতের পক্ষেই সায় দিচ্ছেন। অর্থাৎ এর অর্থ বরখাস্তই করা।
অন্য পক্ষের অবশ্য মত, এর অর্থ বরখাস্ত করা নয়। কারণ, সরাসরি বরখাস্ত বা নিয়োগ বাতিলের কথা বলেননি সি ভি আনন্দ বোস। আবার এমন মতও উঠে আসছে যে, যিনি নিয়োগ করেছেন, তিনিই কীভাবে বরখাস্ত করতে পারেন। তাও আবার মাত্র ১০-১২ দিনের ব্যবধানে। তাহলে কি নিয়োগের সময় পর্যাপ্ত খোঁজখবর নেননি রাজীবের সম্পর্কে বা আরও যে দু’টি নাম পাঠিয়েছিল নবান্ন, তাঁদের সম্পর্কে? নাকি অন্য কোনও কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তখন? সেই প্রশ্ন কিন্তু ব্যুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে লাটসাহেবের বাড়ির দিকেই। ফলে রাজীব সিনহা নির্বাচন কমিশনার রইলেন কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলল না গভীর রাত পর্যন্তও।